শাফায়াত সজল, বগুড়াঃ দিনাজপুর জেলার হিলি স্থলবন্দর কিংবা পাচঁবিবি রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে উত্তরপূর্ব দিকে মাত্র ২০ কিলোমিটার অপরদিকে ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদ থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে ঘোড়াঘাট ইউনিয়নের চৌগাছা মৌজায় মূল সড়কের উত্তর পাশের বিশাল একটি দিঘীর পাশে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী “সুরা মসজিদ”।
নির্জন এলাকায় প্রায় ৫ শত বছরের কালের স্বাক্ষী হয়ে এখনো স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে এই মসজিদটি। মসজিদের নামকরণ নিয়ে আছে অনেক চমকপ্রদ লোককথা। স্থানীয়দের মধ্য কেউ বলেন সৌর মসজিদ, কেউবা বলেন সুরা মসজিদ আবার অনেকেই বলেন শাহ সুজা মসজিদ। মসজিদের নামকরণ নিয়ে স্থানীয়ভাবে মতভেদ থাকলেও প্রত্মতত্ব অধিদপ্তর এই মসজিদের নাম দিয়েছে “ সুরা মসজিদ”। জানা যায়, সৌর শব্দের অর্থ আসমানী বা গায়েবী। লোকচক্ষুর আড়ালে যা ঘটে বা হয় তাই গায়েবী। অর্থ্যাৎ গায়েবী ভাবেই মসজিদটি নির্মিত হয়েছে। আবার অনেকে বলেন, মোঘল আমলে বাংলার নবাব শাহ সুজা এটি নির্মাণ করেছেন বলেই এর নাম শাহ সুজা মসজিদ।
এমন ধরনের আরো অনেক চমকপ্রদ গল্প লোক মুখে শোনা যায়। তবে সরকারী তথ্য মতে এটি সুলতানী আমলের ১৪৯৩-১৫১৮ খ্রিষ্টাব্দে তৈরী। গঠনশৈলী অনুযায়ী এটি ষোল শতকের সুলতান হোসেনশাহী আমলে তৈরী। সুলতানী আমলের এই মসজিদটি প্রধানত ২টি ভাগে বিভক্ত। একটি হলো নামাজ ঘর অপরটি হলো বারান্দা। ৪ ফুট উঁচু মজবুত প্লাটফর্ম এর উপর মসজিদটির কাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। মসজিদের বাহিরের দিকের আয়তন উত্তর – দক্ষিণে ৪০ ফুট ও পূর্ব-পশ্চিমে ২৬ ফুট। প্রধান কক্ষের আয়তন ১৬ ফুট। প্রধান কক্ষের সাথে যুক্ত আছে ৬ ফুট প্রশস্ত রাস্তা। চুন সুড়কীর সাহায্যে ছোট আকৃতির ইট দ্বারা তৈরী এই মসজিদের ছাদে রয়েছে ১টি গম্বুজ ও বারান্দায় রয়েছে ৩টি গম্বুজ। নামাজ ঘরের চারকোণে ৪টি ও বারান্দায় ২টি বুরুজও রয়েছে। পুরো মসজিদের দেয়ালের গায়ে অসংখ্য মৌলিক টেরাকোটার অলংকরণ ও সুসজ্জিত নকশা এই ইমারতের বাহ্যিক সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে।
মসজিদে প্রবেশের জন্য পূর্বদিকে ৩টি ও উত্তর দক্ষিণে ১টি করে খিলান করা প্রবেশ পথ রয়েছে। এছাড়াও বারান্দার উভয় পাশেও একটি করে প্রবেশ পথ আছে। মসজিদের ভিতরে কেবলার দেয়ালে ৩টি সুন্দরভাবে অলংকৃত পাথরের তৈরী অবতল মিহরাব আছে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, কালের স্বাক্ষী এই পুরাকির্তীটিতে অবহেলা ও রক্ষণাবেক্ষনের অভাব পরিলক্ষিত।